ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

রহস্য, সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষমতায় ‘ক্লিওপেট্রা’ 

প্রকাশিত: ১৩:২১, ১২ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

সব বৈশিষ্টের সংমিশ্রণ কি সবার মধ্যে থাকে? তবে রানী ক্লিওপেট্রা এ সকল বৈশিষ্টের অধিকারীনি। 

তাকে গণ্য করা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে। একই সঙ্গে তিনি অপরূপ সুন্দরী, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধীকারিনী এবং রহস্যময়ী। ইতিহাসবিদরা আজও তার রহস্যে ঘেরা জীবন এর ব্যাখ্যা খুঁজতে ব্যস্ত। কিন্তু কে ছিলেন এই ক্লিওপ্রেট্রা?

প্রাচীন মিশরের ফারাও বংশের শেষ রাণী ক্লিওপেট্রা। তিনি মিশরের রানী হলেও মিশরীয় না। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট মিশর জয়ের পর তার সেনাপতি টলেমি মিশর শাসন শুরু করেন। ক্লিওপেট্রা টলেমির বংশধর। ক্লিওপেট্রার বাবা সপ্তম টলেমির মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রা তার ছোট ভাই টলেমি ত্রয়োদশের সঙ্গে যৌথভাবে মিশর শাসন শুরু করেন। ধারণা করা হয় ক্লিওপেট্রা টলেমি ত্রয়োদশকে বিয়েও করেন। ক্লিওপেট্রা মাত্র ৩৯ বছর বেঁচে ছিলেন যার ২২ বছর তিনি মিশর শাসন করেন। এই শাসন কালেই তিনি মিশরকে প্রগতী এবং উন্নতির শিখরে নিয়ে যান। কিন্তু কেনো তাকে রহস্যময়ী বলা হয়?

প্রেম এবং মৃত্যু এই দুইটি বিষয় ক্লিওপেট্রার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। জুলিয়াস সিজারের মিশর জয়ের পর মিশর রোমান অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। এছাড়াও রাজা সপ্তম টলেমির রোমান সম্রাজ্যের কাছে অনেক ঋণ ছিল। এভাবেই ক্লিওপেট্রা রোমান সম্রাজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রোমান সম্রাজের গৃহযুদ্ধে জেনারেল পম্পেই জুলিয়াস সিজারের কাছে হেরে গেলে পম্পেই মিশরে আশ্রয় নেন। জেনারেল পম্পেইকে ত্রয়োদশ টলেমি মৃত্যুদন্ড দেন এবং পুরষ্কার এর আশায় সিজারের কাছে পম্পেইয়ের মস্তক পেশ করেন। কিন্তু খুশি হওয়ার বদলে সিজার মিশরকে রোমের সকল ঋণ শোধ করতে বলেন। ক্লিওপেট্রা সিজারকে রাজি করান যাতে ত্রয়োদশ টলেমিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তাকে মিশরের শাসনভার দেয়া হয়। জুলিয়াস সিজার তাকে শাসনভার দিলেন।

অনেকের মতে ক্লিওপেট্রা সিজারের সঙ্গে গভীর প্রণয়ে মত্ত হন এবং তার সকল প্রয়োজনে সিজারকে ব্যবহার করেন। কিন্তু ক্লিওপেট্রা একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধীকারিনী ছিলেন। তিনি একজন যোগ্য শাসকও ছিলেন। ক্লিওপেট্রা তখনকার পৃথিবীর জ্ঞানগর্ভ আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির পন্ডিতদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি সাতটিরও বেশি ভাষা জানতেন এবং মিশরের বিশাল সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতাও তার ছিল। সিজার ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়েন এবং রোমান সম্রাজ্যে তার প্রয়োজন পরলেও সিজার মিশরেই তার দিন অতিবাহিত করতে থাকেন। যা তার মৃত্যু ডেকে আনে। অনেক ইতিহাসবিদের মতে সিজারকে ক্লিওপেট্রা তার মায়াজ্বালে আটকে রাখেন এবং সিজার এর মৃত্যুর জন্য ক্লিওপেট্রাই দায়ী। কিন্তু আসলেই কি তাই?

সিজার এর মৃত্যুর পিছনে ছিল রোমের নোংরা রাজনীতি। সিজার মিশরে থাকা অবস্থায় মিশরীয় সভ্যতায় মুগ্ধ হয়ে রোমে ফিরে গিয়ে রোমান সম্রাজ্যে এর প্রতিফলন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাচে তার মৃত্যু ঘটে। ক্লিওপেট্রার দায়িত্ব ছিল মিশর শাসন যা তিনি ভালভাবেই পালন করেন। তিনি মিশর এর ভগ্ন অর্থনীতি ঠিক করেন এবং দূর্নীতি দূর করেন। তাছাড়াও তার আমলে রাজ খাদ্যভান্ডার সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। ক্লিওপেট্রা জনগণের উন্নয়নের জন্য কর হ্রাস করেন। একারণেই ক্লিওপেট্রার শাসন আমলে মিশরে কোন বিদ্রোহ ঘটে নি।

জুলিয়াস সিজারের পর ক্লিওপেট্রার জীবনে আসেন নতুন রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্থনি। তার সঙ্গেও ক্লিওপেট্রা প্রেমে লিপ্ত হন। ইতিহাসবিদদের মতে ক্লিওপেট্রা তার এবং সিজার এর ছেলের জীবন রক্ষার জন্যই এই সম্পর্কে লিপ্ত হন। কিন্তু মার্ক অ্যান্থনি এবং ক্লিওপেট্রার সম্পর্ক রোমান সম্রাজ্যে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে। অ্যান্থনিও মিশরে বিলাসী জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। ওদিকে রোমে শুরু ক্ষমতার হাতবদলের খেলা। সেনাপতি অক্টেভিয়ান প্র্রথমে সিনেট ও ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীতে নিজের অবস্থান দৃড় করতে শুরু করেন। অ্যান্থনি যখন পুরো বিষয়টি জানতে পারেন, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। যুদ্ধে অ্যান্থনি মারা যান এবং ক্লিওপেট্রা ধরা দেওয়ার বদলে আত্মহত্যা করেন। কেউ কেউ মনে করেন রানী ক্লিওপেট্রার এই গভীর প্রণয়ই মিশরের পতনের জন্য দায়ী।

ক্লিওপেট্রা নয় বরং একজন নারী সর্বক্ষমতাধর হওয়ার ভয় মূলত মিশর পতনের কারণ। ইতিহাসবিদদের মতে ক্লিওপেট্রা নিজ্বস্ব সাপের দংশনেই মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর আসল কারণ বা তার জীবন ইতিহাস কখনো সামনে আসবে না। কারণ ক্লিওপেট্রার জীবন বিবরণ নিয়ে যত লেখা আছে সব তার শত্রু রোমানদের হাতেই লেখা। তাই ক্লিওপেট্রার জীবন আমাদের কাছে ধোঁয়াশা হয়েই থাকবে। এ কারণেই হয়তো রানী ক্লিওপেট্রা ইতিহাসের রহস্যময়ী হিসেবেই স্থান পেয়েছেন।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ